রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর আগে ও পরের সব ত্রুটি ক্ষমার ঘোষণা থাকা সত্ত্বেও তিনি তাহাজ্জুদে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে ইবাদত করতেন । এতে তাঁর দুই পা ফুলে যেত । কিন্তু এ নিয়ে তিনি কখনো অহংকার করতেন না। এ প্রসঙ্গে আয়েশা (রা.)-এর জিজ্ঞাসার জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি কি কৃতজ্ঞ বান্দা হবো না?’ (বুখারি, হাদিস : ৪৮৯৭)
ফেরেশতারা দিন-রাত আল্লাহর ইবাদত করে।
কিন্তু তারা এ জন্য অহংকার করে না। যেমন আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই (নৈকট্যশীল ফেরেশতারা) যারা তোমার প্রতিপালকের সান্নিধ্যে থাকে, তারা তাঁর ইবাদতে অহংকার করে না। তারা তাঁর গুণগান করে ও তাঁর জন্য সিজদা করে।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ২০৬)
কাজেই ইবাদত হতে হবে অহংকারমুক্ত।
অহংকার দুইভাবে হয়। অন্তরে ও বাইরে। অন্তরের অহংকার আল্লাহ দেখেন। যার পরিণাম অত্যন্ত ভয়াবহ।
আল্লাহ বলেন, ‘আর তোমাদের প্রতিপালক বলেন, তোমরা আমাকে ডাক। আমি তাতে সাড়া দেব। নিশ্চয়ই যারা আমার ইবাদত থেকে অহংকার করে। তারা সত্বর জাহান্নামে প্রবেশ করবে লাঞ্ছিত অবস্থায়।’
(সুরা : মুমিন/গাফের, আয়াত : ৬০)
ইবাদতের মধ্যে অহংকার ও লৌকিকতা থাকলে তার ফল পাওয়া যায় না।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘সব কাজ (কর্মফল) নিয়তের ওপর নির্ভরশীল।’ (বুখারি, হাদিস : ১)
বাইরের অহংকার প্রকাশ পায় কথায় ও কর্মে। যেমন অহংকারীদের বাহ্যিক আচরণ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, ‘যখন তাদের বলা হতো, আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, তখন তারা ঔদ্ধত্য দেখাত।’ (সুরা : সাফফাত, আয়াত : ৩৫)
কর্মে অহংকারী হলো লোক-দেখানো ইবাদতকারীরা। এদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই মুনাফিকরা আল্লাহর সঙ্গে প্রতারণা করে। আর তিনিও তাদের ধোঁকায় নিক্ষেপ করেন। যখন তারা সালাতে দাঁড়ায়, তখন অলসভাবে দাঁড়ায়। তারা লোকদের দেখায় এবং আল্লাহকে খুব কমই স্মরণ করে। এরা দোদুল্যমান অবস্থায় রয়েছে। না এদিকে, না ওদিকে। বস্তুত আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন, তুমি তার জন্য কোনো পথ পাবে না।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ১৪২-১৪৩)
এসব মানুষের নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত সব কিছু বৃথা হবে। আল্লাহ বলেন, ‘আর আমরা সেদিন তাদের কৃতকর্মসমূহের দিকে মনোনিবেশ করব। অতঃপর সেগুলো বিক্ষিপ্ত ধূলিকণায় পরিণত করব।’(সুরা : ফুরকান, আয়াত : ২৩)
মহান আল্লাহ আমাদের অহংকারমুক্ত ইবাদত করার সৌভাগ্য দান করুন।