সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী সম্পদের পাহার যুক্তরাজ্যেই ৩৬০টি বাড়ি: আল–জাজিরার একটি সাম্প্রতিক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে যে তিনি যুক্তরাজ্যে ৩৬০টি বাড়ির মালিক, যার বর্তমান বাজারমূল্য ৩২ কোটি ডলার, যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৩,৮২৪ কোটি টাকা। এই সম্পদের বড় অংশ তিনি বার্কলি গ্রুপের মতো শীর্ষ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান থেকে ক্রয় করেছেন। প্রতিবেদনে আরও দাবি করা হয়েছে যে, যুক্তরাজ্যের বাইরে সাইফুজ্জামান দুবাই এবং যুক্তরাষ্ট্রেও সম্পত্তির মালিক, যার মধ্যে নিউইয়র্কে নয়টি বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট অন্তর্ভুক্ত।
আল–জাজিরার অনুসন্ধানী দল ‘আই ইউনিট’ উল্লেখ করেছে যে, সাইফুজ্জামান চৌধুরী বিদেশের এই বিপুল সম্পদ গোপন করেছেন, যা তাঁর নির্বাচনী হলফনামা ও ট্যাক্স ফাইলে উল্লেখ নেই। তিনি বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাজ্যে এবং অন্যান্য দেশে কীভাবে এত অর্থ সরিয়েছেন, তার সুনির্দিষ্ট পদ্ধতিও অনুসন্ধানে উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সাইফুজ্জামান শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন এবং তাঁর মাধ্যমে বিদেশে অর্থ সরিয়ে বিভিন্ন ধরনের সম্পদ গড়েছেন।
আল–জাজিরার অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে আরও বিস্তারিতভাবে সাইফুজ্জামান চৌধুরীর সম্পদ অর্জনের প্রক্রিয়া ও পদ্ধতি তুলে ধরা হয়েছে। রিপোর্টে বলা হয়, সাইফুজ্জামান ২০১৬ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে যুক্তরাজ্যে ২৬৫টি বাড়ি কেনেন এবং ২০২০ সালে আরও ৮৯টি বাড়ি কিনলে তাঁর মোট সম্পদের সংখ্যা দাঁড়ায় ৩৬০টি। এই বাড়িগুলোর বেশির ভাগই ভাড়া দেওয়া হয়েছে, যা থেকে তিনি বিপুল পরিমাণ আয়ের মালিক হয়েছেন। তাঁর সম্পদের পরিমাণ আশ্চর্যজনকভাবে বড় হওয়া সত্ত্বেও, বিদেশে সম্পদ কেনার ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্যের আইন অনুযায়ী কঠোর যাচাই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে তাঁকে যেতে হয়নি।
- বাংলাদেশি গারো উপজাতিদের জীবন – bangladesh tribal life
- বাংলাদেশ ২৩৩ রানে অলআউট – মুমিনুলের সেঞ্চুরিতে লড়াই
- চট্টগ্রাম বন্দরের অগ্নিকাণ্ড – নিয়ন্ত্রণে বন্দর ও কোস্টগার্ড
- যেসব ব্যাংকে টাকা রাখলে আপনার টাকা গায়েব হয়ে যেতে পারে
- বাংলাদেশ গরীব রাষ্ট্র নয় বিভিন্ন দেশে মিলছে সম্পদের খোঁজ
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, সাইফুজ্জামান যুক্তরাজ্যে বিপুল সম্পদ কেনার জন্য বেশ কয়েকটি কোম্পানি তৈরি করেছিলেন, যার মাধ্যমে তিনি বিভিন্ন ডেভেলপারদের কাছ থেকে বাড়ি কিনেছেন। ২০১৬ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে এই ক্রয়ের মাত্রা ব্যাপক বৃদ্ধি পায়। তাঁর এই সম্পত্তির ব্যাবস্থাপনায় চট্টগ্রামের এক ব্যক্তির নাম উল্লেখ করা হয়েছে, যার মাধ্যমে সাইফুজ্জামান লন্ডনে তাঁর সম্পত্তি দেখাশোনা করেন।
তাঁর সম্পদের উৎস সম্পর্কে আরও বলা হয়, সাইফুজ্জামান তাঁর ব্যবসার লাভ এবং ব্যাংক ঋণের মাধ্যমে যুক্তরাজ্য ও অন্যান্য দেশে এই সম্পদ সংগ্রহ করেন। সিঙ্গাপুরের ডিবিএস ব্যাংকের মাধ্যমে নেওয়া ঋণ এবং মার্কেট ফাইন্যান্সিয়াল সলিউশনের মাধ্যমে শত শত ঋণ ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে।
এছাড়া সাইফুজ্জামানের বিলাসবহুল জীবনযাত্রা সম্পর্কেও কিছু চমকপ্রদ তথ্য পাওয়া গেছে। তিনি আল–জাজিরাকে বলেন, তিনি নিজস্ব অর্ডারে তৈরি জুতা পরেন, যেগুলো উটপাখি ও কুমিরের চামড়া দিয়ে তৈরি এবং প্রতিটি জুতার দাম কয়েক হাজার পাউন্ড পর্যন্ত হয়ে থাকে।
প্রতিবেদনে আরও উঠে এসেছে যে, সাইফুজ্জামান চৌধুরী বাংলাদেশের অর্থনীতির সুরক্ষার জন্য প্রণীত মুদ্রানীতির লঙ্ঘন করেছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি ছাড়া বিদেশে অর্থ নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারটি মানি লন্ডারিং আইনে অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়। যদিও তাঁর বিরুদ্ধে সরাসরি কোনো আইনি ব্যবস্থা এখনো নেওয়া হয়নি, তবুও বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি তাঁর ব্যাংক অ্যাকাউন্টগুলোতে লেনদেন স্থগিতের নির্দেশ দিয়েছে।
সাইফুজ্জামান চৌধুরীর সম্পদের বিষয়ে আল–জাজিরার এই অনুসন্ধান বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মহলে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে।