যেসব ব্যাংকে টাকা রাখলে আপনার টাকা গায়েব হয়ে যেতে পারে: বাংলাদেশে ব্যাংকিং খাতে টাকা রাখার ক্ষেত্রে বেশ কিছু জটিলতা এবং ঝুঁকি রয়েছে, যা আপনার সঞ্চয়ের নিরাপত্তাকে প্রভাবিত করতে পারে। ব্যাংকের অবস্থা যাচাই করতে এবং ঝুঁকিমুক্ত আমানতের জন্য আরও কিছু বিষয় বিবেচনা করা উচিত:
1. ক্রেডিট রেটিং ও অন্যান্য সূচকের অস্পষ্টতা
আগে ব্যাংকের ক্রেডিট রেটিং এবং ক্যামেলস রেটিংয়ের মতো বিভিন্ন সূচক দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হতো। তবে বর্তমানে রেটিং প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বচ্ছতা নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠেছে। দুর্বল ব্যাংকগুলোও ভালো রেটিং পেয়ে যাচ্ছে, যা গ্রাহকদের জন্য বিভ্রান্তিকর। তাই রেটিংয়ের ওপর পুরোপুরি নির্ভর না করে ব্যাংকের আর্থিক স্থিতিশীলতা ও পরিচালন ব্যবস্থার দিকে নজর দেওয়া জরুরি।
2. ব্যাংকের মূলধন পরিস্থিতি ও খেলাপি ঋণের হার
ব্যাংকের মূলধন পরিস্থিতি এবং খেলাপি ঋণের হার একটি গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত দিতে পারে। খেলাপি ঋণ বেশি হলে তা ব্যাংকের তারল্য সংকট সৃষ্টি করতে পারে। তবে অনেক সময় ব্যাংকগুলো বিভিন্ন সুবিধার কারণে খেলাপি ঋণ সঠিকভাবে প্রকাশ করে না। তাই এ ধরনের বিষয়গুলি খতিয়ে দেখার জন্য ব্যাংকের প্রকাশিত আর্থিক প্রতিবেদন এবং নিরীক্ষা রিপোর্ট পর্যালোচনা করা উচিত।
3. কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তত্ত্বাবধান
বাংলাদেশ ব্যাংক কিছু দুর্বল ব্যাংকে পর্যবেক্ষক ও সমন্বয়ক নিয়োগ করেছে। এটি ব্যাংকগুলোর দুর্বলতা নির্দেশ করে। শুধু এই ব্যাংকগুলোকেই দুর্বল বলা যাবে না; বেশ কিছু ব্যাংকের অবস্থাও তেমন ভালো নয়। তাই ব্যাংক নির্বাচন করার আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পর্যবেক্ষণ এবং ওই ব্যাংকের সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনা করতে হবে।
4. দায়িত্বশীল বিনিয়োগ ও ঋণ প্রদানের ক্ষমতা
একটি ব্যাংকের আর্থিক স্থিতিশীলতা অনেকাংশে নির্ভর করে তার ঋণ ব্যবস্থাপনার ওপর। যদি ব্যাংকটি দায়িত্বশীলভাবে ঋণ প্রদান করে এবং অর্থনৈতিক প্রভাবশালী খাতে বিনিয়োগ করে, তাহলে সেখানকার আমানত তুলনামূলকভাবে নিরাপদ। এছাড়া, বড় কর্পোরেট গ্রাহক বা রাজনৈতিক প্রভাবশালী ব্যক্তিদের হাতে অধিক ঋণ জমা থাকলে সেই ব্যাংকের ঝুঁকি বেশি হতে পারে।
5. বাজারের গুজব ও বাস্তবতা
সম্প্রতি ব্যাংক খাত থেকে ৫০ হাজার কোটি টাকা তুলে নেওয়া নিয়ে যে গুজব রটেছে, তা ভিত্তিহীন। বাস্তবে, ব্যাংকের হাতে থাকা অতিরিক্ত তারল্য কমে গেছে, যা মূলত ডলার কেনা এবং ঋণ প্রদানের জন্য ব্যবহার হয়েছে। তাই ব্যাংকিং খাত সম্পর্কে গুজব ও ভিত্তিহীন তথ্যের ওপর নির্ভর না করে, ব্যাংকের নিজস্ব আর্থিক স্থিতিশীলতার ওপর নজর দেওয়া উচিত।
6. অনলাইন রিভিউ এবং গ্রাহক মতামত
ব্যাংক নিয়ে বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে গ্রাহকদের মতামত এবং অভিজ্ঞতা শেয়ার করা হয়। গ্রাহক সেবা, লেনদেনের গতি এবং সমস্যা সমাধানের দক্ষতা ইত্যাদি বিষয়ে অন্যান্য গ্রাহকের মতামত জানা গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে গ্রাহকের টাকা তুলতে বা লেনদেন করতে কোনো ধরনের অসুবিধা বা জটিলতা সৃষ্টি হলে, সেই ব্যাংক এড়িয়ে চলা উচিত।
7. রিজার্ভ ফান্ড ও ব্যালেন্স শিট পর্যালোচনা
ব্যাংকের রিজার্ভ ফান্ড এবং ব্যালেন্স শিট দেখার মাধ্যমে জানা যায়, ব্যাংকটির আর্থিক সক্ষমতা কতটা শক্তিশালী। যদি রিজার্ভ ফান্ড ভালো অবস্থায় থাকে এবং খেলাপি ঋণের চাপ সামলাতে পারে, তাহলে ওই ব্যাংকটি তুলনামূলকভাবে নিরাপদ হতে পারে।
8. টেকনোলজি এবং ডিজিটাল সেবা
যেসব ব্যাংক উন্নত প্রযুক্তি ও ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা প্রদান করে, সেগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রে গ্রাহকদের নিরাপত্তা এবং স্বাচ্ছন্দ্য নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়। ডিজিটাল সেবায় পিছিয়ে থাকা ব্যাংকগুলোতে লেনদেনের গতি কম এবং ঝুঁকি বেশি হতে পারে।
সিদ্ধান্ত গ্রহণে সতর্ক থাকুন:
টাকা রাখার ক্ষেত্রে নিজের দায়িত্বে সঠিক ব্যাংক নির্বাচন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, ভুল সিদ্ধান্তে টাকা আটকে গেলে তার সঠিক মূল্য পাওয়া যায় না, এবং সময়মতো টাকা ফেরত না পেলে গ্রাহকের জন্য তা বড় ক্ষতির কারণ হতে পারে।