ইস্তানবুল, বসফরাস প্রণালীর তীরে অবস্থিত এশিয়া ও ইউরোপ উভয় মহাদেশের অন্তর্গত ইতিহাস ঐতিহ্যে ভরপুর এই শহরটি বর্তমানে তুরস্কের অর্থনৈতিক ও সংস্কৃতির কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। ইস্তানবুল এক সময়কার পরাশক্তি পূর্ব রোমান বা বাইজেন্টাইন সম্রাজ্যের রাজধানী হিসেবে কনস্টান্টিনোপল নামে পরিচিত ছিলো, যা ১৪৫৩ সালে উসমানি সম্রাজ্যের অধীনে আসে এবং একে ইসলাম বুল অথবা ইসলামের শহর, নামকরন করা হয়। ১৯২৩ সালে উসমানি খেলাফত বিলুপ্ত হবার আগ পর্যন্ত এটি ছিল উসমানি সম্রাজ্যের রাজধানী। বাইজেন্টাইন সম্রাজ্য ও এর রাজধানী কনস্টান্টিনোপল এর রয়েছে সুদীর্ঘ ইতিহাস। আজকে আমরা জানবো যেভাবে কন্সটান্টিনোপল ইস্তাম্বুলে পরিণত হয়েছিল
পৃথিবীর ইতিহাসে ইস্তানবুল এর মতো গুরুত্বপূর্ণ শহর খুব কমই রয়েছে। পূর্ব আর পশ্চিমের যোগসূত্র এই শহরকে কেন্দ্র করে দুটো সাম্রাজ্যের উত্থান ও পতন হয়েছে, এর নামও পরিবর্তন করা হয়েছে বেশ কয়েকবার: বাইজান্টিয়াম, জারগ্রাদ, মিকলাগার্দ এবং সবচেয়ে বিখ্যাত কন্সটান্টিনোপল। অন্যদিকে, বাইজান্টিয়াম সাম্রাজ্যের বাইরে থাকা আরবদের কাছে শহরটি পরিচিত ছিল ‘কন্সতান্তিনিয়ে (Konstantiniyye)’ নামে।
ইস্তানবুলের উত্তরে কৃষ্ণসাগর ও দক্ষিণে মারমারা সাগর যুক্ত হয়েছে বসফরাস প্রণালী দ্বারা। বর্তমানে ইউরোপীয়ান অংশে অবস্থিত গোল্ডেন হর্ন ছিল কনস্টান্টিনোপলের খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক জলাভুমি যা বসফরাস প্রণালীতে মিশেছে। এই গোল্ডেন হর্ন কনস্টান্টিনোপল দুর্গকে শত্রুর হাত থেকে রক্ষার জন্য পরিখা হিসেবে ব্যবহৃত হত। রাজধানী কনস্টান্টিনোপলে ছিলো বাইজেন্টাইন সম্রাজ্যের দুর্ভেদ্য দূর্গ। বলা হত কনস্টান্টিনোপলের পতন মানে বাইজেন্টাইন সম্রাজ্যের পতন। তাই এই দুর্গকে রক্ষার জন্য রোমান বাইজেন্টাইনরা তাদের সর্বশক্তি প্রয়োগ করেছিলো।
৬২৯ খ্রিষ্টাব্দ মুতার যুদ্ধ
মুতা’ জর্দানের বালকা এলাকার নিকটবর্তী একটি জনপদ। এই জায়গা থেকে বায়তুল মাকদেসের দূরত্ব মাত্র দুই মানযিল। ৬২৯ সালে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হারেছ ইবনে ওমায়ের আযদীকে একখানি চিঠিসহ বসরার গভর্নরের নিকট প্রেরণ করেন। রোমের কায়সারের গভর্নর শরহাবিল ইবনে আমর গাস্সানি সেই সময় বালকা এলাকায় নিযুক্ত ছিলো। এই দুর্বৃত্ত সাহাবীকে গ্রেফতার করে এবং শক্তভাবে বেঁধে হত্যা করে। স্মরণ করা যেতে পারে যে, দূতহত্যা ছিলো সর্বযুগেই জঘন্যতম অপরাধ। এটা যুদ্ধ ঘোষণার শামিল, এমনকি এর চেয়েও গুরুতর মনে করা হয়। এরপর মুতার যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিলো যা খৃষ্টান অধ্যুষিত দেশসমূহ জয়ের পথ খুলে দেয়।
- বাংলাদেশি গারো উপজাতিদের জীবন – bangladesh tribal life
- বাংলাদেশ ২৩৩ রানে অলআউট – মুমিনুলের সেঞ্চুরিতে লড়াই
- চট্টগ্রাম বন্দরের অগ্নিকাণ্ড – নিয়ন্ত্রণে বন্দর ও কোস্টগার্ড
- যেসব ব্যাংকে টাকা রাখলে আপনার টাকা গায়েব হয়ে যেতে পারে
- বাংলাদেশ গরীব রাষ্ট্র নয় বিভিন্ন দেশে মিলছে সম্পদের খোঁজ
৬৩৬ খ্রিষ্টাব্দ ইয়ারমুক যুদ্ধ
আরবদের অগ্রযাত্রা রোধ, সিরিয়ায় মুসলিমদের ধ্বংস করা ও হারানো অঞ্চল পুনরুদ্ধারের জন্য সম্রাট হেরাক্লিয়াস ৬৩৬ খ্রিষ্টাব্দের লেভান্টে একটি বড় অভিযান প্রেরণ করেন। সেই সময় খলিফা উমর (রা) এর সময়ে সেনাপতি খালিদ বিন ওয়ালিদ (রা) এর নেতৃত্বে ইয়ারমুক নদীর তীরে ছয়দিনব্যপী এই যুদ্ধ সংঘটিত হয়। সেই যুদ্ধে মুসলিম সৈনিকের সংখ্যা ছিল ২৪,০০০ থেকে ৪০,০০০ এবং বাইজেন্টাইন সৈনিকের সংখ্যা ছিল ১,০০,০০০ থেকে ৪,০০,০০০ । রোমান বাহিনী অগ্রসর হওয়ার পর আরবরা কৌশলগত কারণে সিরিয়া থেকে পিছু হটে এবং আরবের কাছাকাছি ইয়ারমুকের সমভূমিতে জমায়েত হয়। পুনরায় সংগঠিত হওয়ার পর মুসলিমরা সংখ্যাধিক বাইজেন্টাইন বাহিনীকে পরাজিত করে। এই যুদ্ধে মুসলিমদের বিজয়ের ফলে সিরিয়ায় বাইজেন্টাইন শাসনের অবসান ঘটে। সামরিক ইতিহাসে এই যুদ্ধ অন্যতম ফলাফল নির্ধারণকারী যুদ্ধ হিসেবে গণ্য হয়। মুহাম্মদ (সা) এর মৃত্যুর পর এই যুদ্ধ জয় মুসলিম বিজয়ের প্রথম বৃহৎ বিজয় হিসেবে দেখা হয়। এর ফলে খ্রিষ্টান লেভান্টে ইসলাম দ্রুত বিস্তার লাভ করে। এই যুদ্ধ সেনাপতি খালিদ বিন ওয়ালিদের (রা.) অন্যতম বৃহৎ সামরিক বিজয়। এর মাধ্যমে তিনি ইতিহাসে একজন শ্রেষ্ঠ রণকুশলী ও অশ্বারোহী কমান্ডার হিসেবে স্থান করে নেয়।
ইয়ারমুকের কথা বর্তমানে কম শোনা গেলেও এটি মানুষের ইতিহাসে অন্যতম প্রধান ফলাফল নির্ধারণী যুদ্ধ হেরাক্লিয়াসের বাহিনী জয়ী হলে বর্তমান পৃথিবী এতটাই ভিন্ন হত যে তাকে আলাদা করে চেনা যেত না।
খ্রিস্টপূর্ব সপ্তম শতক
ইতিহাসবিদদের মতে খ্রিস্টপূর্ব সপ্তম শতকের প্রথমদিকে প্রাচীন গ্রিক মেগান জাতি বসফরাসের তীরে “চালসেডন” নামে অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করে, পরবর্তীতে খ্রিস্টপূর্ব ৬৫৭ সালে মেগান সম্রাট বাইজাস “বাইজেন্টিয়াম” নামে এখানে একটি শহর স্থাপন করেন। শহরটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য বন্দর হিসেবে ব্যবহৃত হতো। এরপর কয়েক শতাব্দী ধরে পর্যায়ক্রমে পারসিয়ান, এথিনিয়ান, স্পার্টান এবং মেসোডোনিয়ানদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হতে থাকে।
খ্রিস্টপূর্ব সপ্তম শতাব্দীতে গ্রিকদের হাত ধরে গড়ে ওঠা বসতির নাম ছিল বাইজান্টিয়ন। পরবর্তীতে এর নাম ল্যাটিনাইজড করে রাখা হয় বাইজান্টিয়াম। এর নাম রোমানরা আরও কয়েকবার পরিবর্তন করে: অগাস্টা অ্যান্টোনিনা, নোভা রোমা (নতুন রোম)-এর মতো নামে। এরপর আসেন সম্রাট কন্সটান্টিন। প্রথমে নিজের রাজধানী হিসেবে সারডিকাকে যা বর্তমান বুলগেরিয়ার রাজধানী সোফিয়া, নির্বাচন করলেও পরে একে সরিয়ে বাইজান্টিয়ামে নিয়ে আসেন, নিজের নাম অনুসারে রাখেন কন্সটান্টিনোপল।
এর আগে রোমান সম্রাট কন্সট্যান্টাইন কর্তৃক ৩৩০ সাল থেকে কনস্টান্টিনোপল রাজধানী হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছিল। পরবর্তী ১১ শতাব্দী যাবত শহরটি বেশ কয়েকবার অবরোধ সম্মুখীন হলেও ১২০৪ সালে চতুর্থ ক্রুসেডের সময় ছাড়া এটি কেউ দখল করতে পারেনি।
চতুর্থ ক্রুসেড (১২০১ – ১২০৪) মূলত সাজানো হয়েছিল মিশরে হামলা চালিয়ে জেরুজালেম দখলের উদ্দেশ্যে। পরিবর্তে এপ্রিল ১২০৪ সালে ক্রুসেডাররা গ্রিক অর্থডক্স শহর কনস্টান্টিনোপলে হানা দেয় এনং দখল করে, যা ছিল বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের রাজধানী। এটিকে ইতিহাসের সবচেয়ে লাভজনক ও অমার্জিত লুণ্ঠন বলে মনে করা করা হয়।
ক্রুসেডাররা কনস্টান্টিনোপলকে ঘিরে একটি অস্থায়ী ল্যাটিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে। তবে সাম্রাজ্যের বাকি অংশ বেশ কিছু গ্রীক রাষ্ট্র, বিশেষ করে নাইসিয়া, এপিরাস ও ট্রেবিজন্ডে বিভক্ত হয়ে পড়ে। এই গ্রীকরা মিত্র হিসেবে ল্যাটিন শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করলেও বাইজেন্টাইন মুকুটের জন্যও নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগীতায় লিপ্ত হয়।
১৪৩২ খ্রিষ্টাব্দ
১৪৩২ সাল সুলতান দ্বিতীয় মুরাদ ও মা হুমা খাতুন এর কলজুরে আসে শাহজাদা দ্বিতীয় মুহাম্মদ । অতন্ত মেধা সম্পন্ন এই বালক টি একদিন বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের পতন এর কারন হবে তা কেও কল্পনাও করেনি । ১৪৫১ সালে সুলতান দ্বিতীয় মুহাম্মদ তার পিতার উত্তরাধিকারী হন। মাত্র ১৯ বছর বয়সী একজন তরুণ শাসক হিসেবে কতটুকু যোগ্য তা নিয়ে অনেকের মনেই প্রশ্ন উঠে। বলকান ও এজিয়ান অঞ্চলে তিনি খ্রিষ্টানদের বিরুদ্ধে তেমন কোনো সফল ব্যক্তি হতে পারবেন না-বলেই সবার ধারণা ছিল। কিন্তু দিন যতই যেতে থাকে ততই তার প্রজ্ঞা ও কৌশল সবার সামনে স্পষ্ট হয়েছে। অভিনব রণকৌশল প্রয়োগ করে তিনি নিজেকে প্রমাণ করেন একজন যোগ্য শাসক হিসেবে।
১৯ বছর বয়সী তরুণ শাসক অযোগ্য হবেন এবং বলকান এবং এজিয়ান অঞ্চলের খ্রিষ্টানদের জন্য হুমকি হবেন না বলে ব্যাপকভাবে ধারণা করা হত। তার দরবারে পাঠানো দূতদের সাথে মুহাম্মদের বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ এই ধারণাকে আরো বাড়িয়ে তোলে। কিন্তু তার কাজ তার কথার চাইতেও শক্ত প্রমাণিত হয়। ১৪৫২ এর শুরুতে তিনি বসফোরাসে রুমেলি হিসারি নামক দ্বিতীয় উসমানীয় দুর্গ গড়ে তোলেন। কনস্টান্টিনোপলের কয়েক মাইল উত্তরে ইউরোপীয় অংশ সেই দুর্গ গড়ে তোলা হয়। তার প্রপিতামহ প্রথম বায়েজিদ সেই দুর্গের অনুরূপ আনাদোলু হিসারি তৈরী করেছিলেন। এটি এশীয় অংশে ছিল। সেই দুর্গ দুটির কারণে তুর্কিরা বসফরাসের উপর চলমান নৌযানের উপর পূর্ণ কর্তৃত্ব স্থাপন করতে সক্ষম হয়।বিশেষত এটি উত্তরে কৃষ্ণ সাগর উপকূলের জেনোয়া কলোনি থেকে কনস্টান্টিনোপল আসার পথে বাধা প্রদান করে। কৌশলগত অবস্থানের কারণে নতুন দুর্গকে ‘’বোগাযকেসেন’’ বলা হত যার অর্থ “প্রণালি-রুদ্ধকারী” বা “গলা-কর্তনকারী”।
১৪৫২ সালের অক্টোবর সুলতান মুহাম্মদ তুরাখান বেগকে পেলোপন্নিসের উদ্দেশ্যে বিরাট এক নৌবহর নিয়ে অভিযানের নির্দেশ দেন এবং আসন্ন কনস্টান্টিনোপল অবরোধের সময় যাতে থমাস এবং ডেমেট্রিওস তাদের ভাই সম্রাট একাদশ কনস্টান্টাইন পেলেইওলোগসকে সাহায্য করতে না পারে সে উদ্দেশ্যে সেখানে অবস্থানের নির্দেশ দেন।
বাইজেন্টাইন সম্রাট একাদশ কনস্টান্টাইন সুলতান মুহাম্মদের উদ্দেশ্য বুঝতে পারেন এবং পশ্চিম ইউরোপের কাছে সাহায্য চেয়ে আবেদন করেন। কিন্তু শতাব্দীব্যাপী যুদ্ধ ও পূর্ব এবং পশ্চিমের চার্চের মধ্যকার বিরোধের ফলে কাঙ্খিত সাহায্য পাওয়া যায়নি।
সুলতান মুহাম্মদ সমুদ্রের দিক থেকে শহর অবরোধের জন্য একটি নৌবহর গড়ে তোলেন। এটি অংশত গেলিপোলির গ্রিক নাবিকদের নিয়ে গঠিত হয়েছিল।
উসমানীয়রা মাঝারি আকারের কামান তৈরীতে দক্ষ একথা অবরোধের আগে সবার জানা ছিল। কিন্তু গোলা ছোড়ার পাল্লা প্রতিপক্ষের ধারণার বাইরে চলে যায়। অস্ত্রের ক্ষেত্রে উসমানীয়দের এই সক্ষমতা উরবান নামক এক হাঙ্গেরিয়ান (কারো মতে জার্মান) ব্যক্তির কারণে সম্ভব হয়।
তার নকশা করা একটি কামানের নাম ছিল “শাহি”। এটির দৈর্ঘ্য ছিল ২৭ ফুট (৮.২ মি) এবং এটি ৬০০ পাউন্ডের (২৭২ কেজি) একটি গোলা প্রায় এক মাইল (১.৬ কিমি) দূরে ছুড়ে মারতে পারত।
বেশ কয়েকবার চেষ্টার পরও উসমানীয় নৌবহরগুলো যখন গোল্ডেন হর্নে প্রবেশ করতে পারছে না তখন অভিনব বুদ্ধি মাথায় আসে সুলতান মুহাম্মদের। তিনি গোল্ডেন হর্নের উত্তরে গালাটার উপর দিয়ে চর্বি মাখানো কাঠের একটি রাস্তা তৈরির আদেশ দেন। অর্থাৎ, স্থলপথে নৌকা চালানোর অবিশ্বাস্য ঘটনা!
জাহাজগুলোকে টেনে গোল্ডেন হর্নে নিয়ে যাওয়া হয়। ফলে বাইজেনটাইনদের মনোবল ভেঙ্গে যায়। ২৮ এপ্রিল রাতে উসমানীয় জাহাজগুলো ধ্বংস করার একটা চেষ্টা চালানো হয়। কিন্তু উসমানীয়রা পূর্বে সংকেত পাওয়ায় খ্রিস্টান বাহিনী ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয় এবং পিছু হটে।এভাবে নানা ঘটনা পরিক্রমায় মুসলমানদের হাতে পতন হয় কনস্টান্টিনোপল। বিজয়ীর বেশে কনস্টান্টিনোপোল শহরে প্রবেশ করেন সুলতান মুহাম্মদ ফাতেহ আর সকল শহরবাসি কে সাধারন ক্ষমা করে এবং সকল ধরমের মানুষকে শান্তিতে শহরে বসবাস করার অনুমতি প্রদান করে, শহরের নাম পাল্টে এর নাম রাখা হয় ইসলামবুল যার অর্থ ইসলামের শহর। শুরু হয় ইসলামবুল এর নতুন ইতিহাস।
অটোমানরা কন্সটান্টিনোপল শহর নিজেদের সাম্রাজ্যে অন্তর্ভুক্তির পর এর দুটো নাম ছড়িয়ে পড়ে, নথিপত্রে মূলত কন্সতান্তিনিয়ে (মূল আরবি থেকে) ব্যবহৃত হতো, অন্যদিকে শহরের বেশ কিছু বাসিন্দার কাছে পরিচিত ছিল ইস্তিনপোলিন নামে।
১৮৭৬ সালে সরকারি সংবিধানে এর নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘ইস্তাম্বুল (Istanbul)’। তবে কন্সটান্টিনোপল নামটিই অন্যান্য দেশ ব্যবহার করে আসছিলো প্রথম বিশ্বযুদ্ধ এবং অটোমান সাম্রাজ্য ভেঙে যাওয়ার আগপর্যন্ত। কামাল আতাতুর্ক একে পরিবর্তনের উদ্যোগ নেন। ১৯২৩ সালে তিনি অন্যান্য দেশগুলোকেও শহরটিকে ইস্তাম্বুল নামে ডাকার আহ্বান করেন, যেটি ইতোমধ্যেই তুরস্কের জনগণ ব্যবহার শুরু করেছিল। তবে কোনো ইউরোপীয় পরাশক্তিই সেই আহ্বানে সাড়া দেয়নি, তারা আগের ‘কনস্টান্টিনোপল’ই চালিয়ে যেতে থাকে।
অবশেষে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তুরস্কের আহ্বানকে সম্মান জানিয়ে ‘ইস্তাম্বুল’ ডাকা শুরু করলে তুরস্ক তাদের দাবিকে গুরুত্বপূর্ণ করে তোলার প্রয়াস নেয়। ১৯৩০ সালে তারা এক আইন পাশ করে যেখানে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, কোনো ডাকে ‘কন্সটান্টিনোপল’ লেখা থাকলে সেই ডাক বা চিঠি আর প্রাপকের কাছে পৌঁছাবে না। এরপর থেকে সব দেশই ‘ইস্তাম্বুল’ নামে শহরটিকে ডাকা শুরু করে। কেবল গ্রিকরা ছাড়া, তারা এখনও ‘কনস্টান্টিনোপল’ নামেই শহরটিকে ডাকে।