গণপিটুনি মারা যাওয়া সেই যুবক ছিলেন মানসিক ভারসাম্যহীন নাম তোফাজ্জল হোসেন ঃ তোফাজ্জল হোসেনের ঘটনা একটি অত্যন্ত বেদনাদায়ক ও মর্মান্তিক উদাহরণ, যেখানে সামাজিক অবহেলা এবং ভুল বোঝাবুঝি একত্রে একজন নিরীহ ও অসহায় মানুষের জীবন কেড়ে নিয়েছে। তার জীবন কাহিনী এবং পরিণতি আমাদের সমাজে মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি উদাসীনতা, সহমর্মিতার অভাব এবং আইন নিজের হাতে তুলে নেয়ার বিপজ্জনক প্রবণতাকে আরও প্রকটভাবে সামনে নিয়ে আসে।
প্রেমঘটিত ব্যর্থতার পর মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলা তোফাজ্জল, একসময় ছাত্রলীগের ইউনিয়ন সভাপতি ছিলেন, যা তার নেতৃত্বের গুণাবলির প্রতিফলন। তবে জীবনের কঠিন বাস্তবতা, পরিবারের মৃত্যুর শোক এবং মানসিক অস্থিরতা তাকে পুরোপুরি একা ও বিপর্যস্ত করে ফেলে। তার মানসিক অবস্থার অবনতি হলেও, তিনি সহিংস বা হিংস্র ছিলেন না। বরং তার চাহিদা ছিল সামান্য, প্রায়শই খাবার বা একটু সাহায্যের জন্যই ক্যাম্পাসে ঘুরে বেড়াতেন।
- বাংলাদেশি গারো উপজাতিদের জীবন – bangladesh tribal life
- বাংলাদেশ ২৩৩ রানে অলআউট – মুমিনুলের সেঞ্চুরিতে লড়াই
- চট্টগ্রাম বন্দরের অগ্নিকাণ্ড – নিয়ন্ত্রণে বন্দর ও কোস্টগার্ড
- যেসব ব্যাংকে টাকা রাখলে আপনার টাকা গায়েব হয়ে যেতে পারে
- বাংলাদেশ গরীব রাষ্ট্র নয় বিভিন্ন দেশে মিলছে সম্পদের খোঁজ
দুর্ভাগ্যবশত, যেদিন তোফাজ্জল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে প্রবেশ করেন, সেদিন হলের শিক্ষার্থীরা তাকে চোর সন্দেহ করে। সন্দেহের বশে তারা তাকে নির্মমভাবে গণপিটুনি দেয়, যা শেষ পর্যন্ত তার মৃত্যুর কারণ হয়। গণপিটুনির সংস্কৃতি, যা সমাজে একধরনের আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার প্রবণতা তৈরি করেছে, এর ফলে আরেকটি নির্দোষ জীবন অকালে ঝরে গেলো।
আরিফুজ্জামান আল ইমরান তোফাজ্জলের পরিচয় তুলে ধরে একটি ফেসবুক স্ট্যাটাসে উল্লেখ করেন, তিনি তোফাজ্জলকে পূর্ব থেকেই চিনতেন এবং তার মানসিক অবস্থার কথা জানতেন। ইমরান তোফাজ্জলকে সহায়তা করতেন এবং তার সাথে কুশল বিনিময় করতেন যখনই দেখা হতো। সেই রাতে যখন তিনি তোফাজ্জলের সম্পর্কে খবর পান, তখন তিনি স্ট্যাটাসে আরও লিখেন যে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন সহপাঠীদের কাছে আবেদন করেছিলেন যেন তোফাজ্জলকে মারধর না করা হয়। তবে, কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি জানতে পারেন যে তোফাজ্জল নির্মমভাবে পিটিয়ে মারা গেছে।
এই ঘটনা আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, সমাজে মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সচেতনতার ঘাটতি কতটা বিপজ্জনক হতে পারে। একজন মানসিকভাবে অসুস্থ ব্যক্তি, যিনি সাহায্যের জন্য নির্ভরশীল, তাকে সহানুভূতির বদলে সন্দেহ এবং সহিংসতার মুখোমুখি হতে হয়েছিল। ঢাবির মতো প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের এমন অমানবিক আচরণ সমাজের জন্যও একটি বড় প্রশ্নবোধক চিহ্ন রাখে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থীদের নৈতিকতা, সহমর্মিতা এবং মানবিক গুণাবলির বিকাশ যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা এই ঘটনায় প্রমাণিত হয়।
ইমরান তোফাজ্জলের জন্য বিচার চাইছেন, কিন্তু তার পরিবারের আর কেউ জীবিত নেই এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চাওয়ার জন্য। তবুও, ইমরান ব্যক্তিগতভাবে এই ঘটনার আইনি প্রক্রিয়ায় লড়াই করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যাতে তোফাজ্জলের নির্দোষ প্রাণের বিনিময়ে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয় এবং ভবিষ্যতে এমন ঘটনা এড়ানো যায়।
এ ঘটনাটি শুধু একটি গণপিটুনিতে হত্যার ঘটনা নয়; এটি সমাজের সহানুভূতির অভাব, মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে উদাসীনতা এবং বিচারহীনতার সংস্কৃতির ফলাফল।