আয়নাঘরে ২১ দিন কেমন ছিল জানালেন নওশাবা লোহমর্ষক বর্ণনা । কাজী নওশাবা আহমেদ ছিলেন একজন জনপ্রিয় অভিনেত্রী, যিনি নিজের অভিনয় দক্ষতায় দ্রুত জনপ্রিয়তার শিখরে পৌঁছেছিলেন। কিন্তু ২০১৮ সালের নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সময় ঘটে যাওয়া একটি ঘটনার কারণে তার জীবনের মোড় সম্পূর্ণ বদলে যায়। সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্ট দেওয়ার দায়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়, এবং সেই ঘটনা তার জীবনে এক গভীর ক্ষতের জন্ম দেয়, যা তিনি এতদিন কারো সামনে প্রকাশ করেননি।
তানভীর তারেকের শো-তে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নওশাবা প্রথমবারের মতো এই ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরেছেন। তিনি জানান, গ্রেফতারের পর তাকে যে পরিস্থিতির মধ্যে ফেলা হয়েছিল, তা ছিল অত্যন্ত ভয়াবহ। তাকে ২১ দিন আয়নাঘরের মতো একটি স্থানে আটকে রেখে কঠোর মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করা হয়। সেই সময়ের প্রতিটি মুহূর্ত তার জন্য ছিল এক অমানবিক সংগ্রাম। সেই কঠিন সময় কাটিয়ে ওঠার পর, তাকে ছয় মাস ধরে একটি রিহ্যাব সেন্টারে কাটাতে বাধ্য করা হয়, যেখানে তার মানসিক অবস্থা এতটাই ভেঙে পড়েছিল যে তিনি নিজের মেয়েকেও চিনতে পারতেন না।
আরও পড়ুন ঃ
- বাংলাদেশি গারো উপজাতিদের জীবন – bangladesh tribal life
- বাংলাদেশ ২৩৩ রানে অলআউট – মুমিনুলের সেঞ্চুরিতে লড়াই
- চট্টগ্রাম বন্দরের অগ্নিকাণ্ড – নিয়ন্ত্রণে বন্দর ও কোস্টগার্ড
- যেসব ব্যাংকে টাকা রাখলে আপনার টাকা গায়েব হয়ে যেতে পারে
- বাংলাদেশ গরীব রাষ্ট্র নয় বিভিন্ন দেশে মিলছে সম্পদের খোঁজ
নওশাবার জন্য এই সময়টা শুধু মানসিক নয়, সামাজিক ও ব্যক্তিগত জীবনেও এক বিপর্যয় ছিল। তিনি জানান, গত ছয় বছরে তার জীবন ছিল এক দুঃস্বপ্নের মতো। তাকে এবং তার মেয়েকে ২০ বারেরও বেশি বাসা পরিবর্তন করতে হয়েছে, কারণ কেউ তাকে বাসা ভাড়া দিতে রাজি হতো না। সমাজের চোখে তিনি হয়ে উঠেছিলেন একজন অপাংক্তেয় ব্যক্তি, যার পাশে দাঁড়ানোর সাহস কেউ দেখায়নি। এমনকি তার নিজের পরিবারও তাকে নিরাপদ মনে করেনি, ভাই ও আত্মীয়স্বজনের বাড়িতেও তার জায়গা হয়নি। তাই বাধ্য হয়ে তিনি বন্ধুর নামে বাসা ভাড়া নিতেন, এবং বোরকা পরে সেখানে ঢুকতেন যাতে কেউ তাকে চিনতে না পারে।
নওশাবা আরো বলেন, তাকে নানা ধরণের প্রলোভন দেখানো হয়েছিল, আপোষ করার প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু তিনি কোনো ধরনের আপোষে রাজি হননি। তিনি তার মর্যাদা এবং নীতির সঙ্গে আপোষ না করে নিজের অবস্থান থেকে লড়াই চালিয়ে গেছেন। সেই ঘটনার বিরুদ্ধে তিনি মামলা করেছিলেন, যা এখনও চলছে।
এই সাক্ষাৎকারে কাজী নওশাবা আহমেদ তার জীবনের অন্ধকার অধ্যায়ের কথা তুলে ধরে দেখিয়েছেন, কীভাবে একটি ঘটনা তার পুরো জীবনকে তছনছ করে দিয়েছিল। তবে সব প্রতিকূলতা সত্ত্বেও তিনি সাহসিকতার সঙ্গে সামনে এগিয়ে গেছেন। এতদিন নিজের যন্ত্রণা নীরবে বয়ে বেড়ানো এই অভিনেত্রী এবার সাহস করে তা প্রকাশ্যে এনেছেন, যেন অন্যরা তার অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিতে পারে।